আসুন জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
লক্ষ্য কি?
স্বপ্ন দেখা সবারই ভালো লাগে। ধনী হওয়া, কোম্পানির মালিক হওয়া, বিলাসবহুল জীবনযাপন করা – এসব কল্পনা আমাদের মনকে উজ্জ্বল করে। কিন্তু যখন আমরা এই স্বপ্নগুলোকে নির্দিষ্ট এবং সময়সীমা বেঁধে কার্যকর পদক্ষেপে রূপান্তর করি, তখন সেগুলো লক্ষ্য হয়ে ওঠে।
কিছু উদাহরণ:
স্বপ্ন: আমি ধনী হতে চাই।
লক্ষ্য: আমি আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৳১ কোটি টাকা রোজগার করবো।
স্বপ্ন: আমি একজন বিখ্যাত লেখক হতে চাই।লক্ষ্য: আমি আগামী ১ বছরের মধ্যে আমার প্রথম উপন্যাস লিখে শেষ করবো এবং একটি প্রকাশনীর কাছে পাঠাবো।
স্বপ্ন: আমি বিশ্ব ভ্রমণ করতে চাই।
লক্ষ্য: আমি আগামী বছরের ছুটিতে ইউরোপের ৫টি দেশ ভ্রমণ করবো।
সুতরাং লক্ষ্য হলো সুনির্দিষ্ট করে কোনো কিছু পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছু সুনির্দিষ্ট করে পাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন তখন পর্যন্ত সেটা কল্পনা রয়ে যাবে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভয় পায় না কিন্তু লক্ষ্য নির্ধারণ করতে ভয় পায়। এর পেছনে মূল কারণ হলো বিশ্বাস ও জ্ঞানের অভাব! লক্ষ্যে সফল হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো বিশ্বাস ও জ্ঞান, আমি পারব! আপনার লক্ষ্য কত বড়, কত বাস্তবায়নে কত কঠিন সেটা বড় কথা নয় বরং লক্ষ্য অর্জনে আপনার কতটুকু বিশ্বাস ও জ্ঞান আছে সেটাই বড় কথা।
সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের লক্ষ্য
আমাদের মেধাবী ছাত্র যারা স্কুলে পড়ে তাদের লক্ষ্য হলো-ডাক্তার বা প্রকৌশলী হওয়া। যখন তারা এতে ব্যর্থ হয় তখন তাদের লক্ষ্য হয় সরকারি চাকুরি।
প্রশ্ন হল আমাদের যে পরিমাণ শিক্ষিত জনসংখ্যা সে তুলনায় কি সরকারী চাকুরী আছে?
আর সবাই যদি ডাক্তার, প্রকৌশলী বা সরকারি চাকুরীজীবী হবে তাহলে রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, শিক্ষক, লেখক, দার্শনিক, শিল্পী ইত্যাদি হবেন কে? ভ
আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরাও এধরণের স্বপ্ন দেখে থাকেন। আলিয়া মাদ্রাসা হলো-দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল ধারার মাদ্রাসা।
আমি চাকুরি ছোট করে দেখছিনা, আমি এটাই বুঝাতে চাইছি যে, যে যেটা পছন্দ বা সহজ মনে করবে সেটাই করবে।
إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتٰ
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন রকমের।” (৯২-সূরা আল লাইল: আয়াত-৪)
“আমল বা কাজ করতে থাক। প্রত্যেকের জন্য তা-ই সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে”। [বুখারী হা/৪৯৪৭।]
কেন আমাদের একমুখী (চাকুরি) লক্ষ্য বা স্বপ্ন?
সহজ উত্তর হল- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের বর্তমান যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে সেটা মূলত ব্রিটিশদের প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থা। ব্রিটিশরা এই উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিল, যাতে তারা একদল অনুগত শিক্ষিত কর্মচারী পায়। ফলে আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়েগেছে চাকুরী বৃত্তিক মানিসিকতা। এটাকে বানরের মানিসিকতাও বলা হয়ে থাকে। বানরের মানিসিকতা কি?
– আপনি যদি বানরের সামনে একটি কলা আর একটি এক হাজার টাকার নোট রাখেন। সে কেবল কলাটিই নিবে, টাকা নিবে না। কারণ বানর চিন্তাও করতে পারে না যে এই নোট দিয়ে অনেক কলা কেনা যাবে। অর্থাৎ আমারা কেবল চাকুরীই খুঁজি কিন্তু ব্যবসা করে যে অনেক টাকা আর কর্মসংস্থান তৈরি করা যায় সেটা ভাবতেও পারি না।
আমি চাকুরিকে ছোট করে দেখছিনা, আমি এটাই বুঝাতে চাইছি যে, যে যেটা পছন্দ বা সহজ মনে করবে সে সেটাই করবে।
إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتٰ
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন রকমের।” (৯২-সূরা আল লাইল: আয়াত-৪)
“আমল বা কাজ করতে থাক। প্রত্যেকের জন্য তা-ই সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে”। [বুখারী হা/৪৯৪৭।]
কাওমি মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের লক্ষ্য
যারা কাওমি মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের উদ্দেশ্য হলো-তারা মাদ্রাসার শিক্ষক আর ইমাম হবে। ঈমামতি করে অনেকের চলে না ফলে সাইট ব্যবসা হিসেবে অনেকে কিছু বিদআত করে থাকে। অথচ নবী করিম (সাঃ) আর তাঁর বেশির ভাগ সাহাবাদের পেশা ছিল ব্যবসা।
কিছু আলেম আছেন যারা ভিন্ন বা উন্নত চিন্তা-চেতনার। এঁদের পরিমাণ এতো নগন্য যে হিসবে ধরা যায় না। কিছু কাওমি আলেম আছেন যারা ব্যবসা করেন। তাদেরকে জন্য অভিনন্দন ও শুভ কামনা!
ব্যবসা-বাণিজ্য জীবিকা উপার্জনের সর্বোত্তম পেশা হওয়ায় মহানবী (ছাঃ) ও অধিকাংশ ছাহাবী এর মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কুরআনের বাণী এবং মহানবী (ছাঃ)-এর সহীহ হাদীছ দ্বারা উৎসাহিত হয়ে ছাহাবীগণ জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ঐ সকল ব্যবসায়ী ছাহাবীর মাধ্যমেই ইসলামের আগমন ঘটে। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ব্যবসা-বাণিজ্য।
ব্যবসাকে হালাল ঘোষণা করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- “আল্লাহপাক ব্যবসাকে বা কেনাবেচাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন” (সূরা বাক্বারা: আয়াত ২৭৫)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে ঘ্রাস করো না কিন্তু পরস্পর রাজী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ’ (সূরা নিসা: আয়াত-২৯)।
সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী ক্বিয়ামতের দিন নবী, ছিদ্দীক্ব এবং শহীদগণের সাথে থাকবে’। [তিরমিযী, হা/১২০৯; হাদীছ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৮২।]
চিন্তার উপর ভিত্তি করে লক্ষ্য তৈরি হয়
আপনি যদি নিজেকে নগণ্য মনে করেন, তাহলে আপনার জীবনও নগণ্য হয়ে থাকবে। কিন্তু যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে আপনি মহান কিছু করতে সক্ষম, তাহলে আপনি সেই মহানতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাবেন।
ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনার লক্ষ্যকে উঁচু করে তোলে এবং আপনাকে সেগুলি অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করে। নিয়মিত ইতিবাচক বই পড়া, অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটানো এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনাকে অভ্যাসে পরিণত করা আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী এবং সফল করে তুলতে পারে।
কর্ম করার জন্যই আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। অলস জীবন যাপন করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। নিচের আয়াত দুটি গভীরভাবে বুঝার চেষ্টা করুন।
তিনি(আল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য—এটা নির্নয় করার জন্য যে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? (পারা: ২৯, সূরা মুলক, আয়াত: ২)
‘আর নামাজ (সালাত) শেষ হলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশে জমিনে ছড়িয়ে পড়। আর তোমরা বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা জুমা: ১০)
বড় স্বপ্ন দেখলে তা বাস্তবায়ন হবেই ইনশাআল্লাহ কিন্তু কীভাবে?
ছোটতে আমাদের বড় বড় স্বপ্ন থাকে। কিন্তু যতই বড় হতে থাকে ততই স্বপ্ন ছোট হতে থাকে। কারণ আমাদের নেতিবাচক পরিবেশের সেই বিখ্যাত উক্তি, “ না, তুমি পারবা না”।
কিন্তু স্বপ্ন দেখতেই হবে। কারণ আপনি যদি ব্যর্থ হোন তাহলে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম সেটা জয় করবে। আমি দেখেছি, বাবার স্বপ্ন ছিল, তিনি ডাক্তার হবেন, বিভিন্ন কারণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু তার কন্যাকে ডাক্তার বানিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
অনেক পিতা রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু তার ছেলে সফল রাজনীতিক হয়েছেন।
অনেক পিতা বড় ব্যবসায়ী হতে পারেনি। কিন্তু তার ছেলে শিল্পপতি হয়েছেন।
অনেকে আইনজীবী হতে পারেননি। কিন্তু তার ছেলে ব্যারিস্টার হয়েছেন।
অর্থাৎ আপনাকে স্বপ্ন দেখতেই হবে। আপনি ব্যর্থ হলে আপনার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সফল হবে। আর আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তাহলে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো কিছুই করতে পারবে না বা পিছিয়ে থাকবে।
কেন আমাদের প্রিয়জনরা আমাদের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করে
আপনি যদি চাকুরী ছাড়া কোন লক্ষ্য বা স্বপ্ন দেখেন-যেমন ব্যবসা, রাজনীতি, জ্ঞান সাধনা। আমাদের প্রিয়জনরা ভালোবেসেই আপনাকে বাধা দিবে। কারণ তারা কুয়োর ব্যঙ্গ। তারা একমাত্র চাকুরিকেই জীবনের লক্ষ্য মনে করে। তাদের বিশ্বাস চাকুরিই পারে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে। তাই চাকু্রি বাদে আপনার যে কোন লক্ষ্যকে আপনার মঙ্গল কামনা করেই গলা টিপে হত্যা করবে। আর আপনি যদি বাধা দেন বা আপনার লক্ষ্যের উপর স্থির থাকেন, তাহলে আপনাকে শুধরানোর লক্ষ্যে মানসিক অতঃপর শারীরিক নির্যাতন করতে পারে। তাতে কাজ না হলে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। কিন্তু কেন এমন আচরণ করে আমাদের প্রিয়জনরা?
এন্ড্রি মরো বলেছেন- “যা কিছু আমাদের ব্যক্তিগত স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বা সামঞ্জস্যপূর্ণ তাই আমাদের কাছে সত্য মনে হয় আর অন্য সবকিছু শুধুমাত্র আমাদের ক্রোধ উৎপন্ন করে।”
চাকুরি বাদে অন্য সবকিছু তাদের স্বভাবের বা মানসিকতার বা চিন্তা-চেতনার সাথে খাপ খায় না। তাই তাদের রাগ উৎপন্ন হয়। ফলে তারা আপনাকে নির্যাতন করে আপনাকে ভালোবেসেই। তারা আমাদের ভালো কামনা করেই আমাদের স্বপ্ন বা লক্ষ্যকে হত্যা করে কিন্তু তারা বোঝে না যে এটা তাদের অন্যায়।
পৃথীবির ইতিহাসে দেখতে পাবেন যে ধর্ম বা মতাদর্শ বা ক্ষমতার কারণে পিতা-পুত্র বা ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ হয়েছে। বর্তমান এটা স্বাভাবিক যে মতাদর্শের কারণে নিজেরা একে-অপরকে নির্যাতন করে।
সুতরাং আপনার প্রিয়জনরা মতাদর্শ বা চিন্তা-চেতনার কারণে বা অপছন্দ হওয়ার কারণে আপনার লক্ষ্য বা স্বপ্নকে হত্যা করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।
আমি চাকুরি ছোট করে দেখছিনা, আমি এটাই বুঝাতে চাইছি যে, যে যেটা পছন্দ বা সহজ মনে করবে সে সেটাই করবে।
إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتٰ
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন রকমের।” (৯২-সূরা আল লাইল: আয়াত-৪)
“আমল বা কাজ করতে থাক। প্রত্যেকের জন্য তা-ই সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে”। [বুখারী হা/৪৯৪৭।]
আমাদের পিতা যখন আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে
আমরা কি হব- অনেক সময় আমাদের পিতা-মাতা জন্মের পূর্বেই নির্ধারণ করে থাকেন যা বড়ই অন্যায় বা নির্যাতন বা আসল লক্ষ্য ধবংস হওয়ার কারণ। কেননা এই পৃথীবির মালিক আল্লাহ নির্ধারণ করেন কাকে দিয়ে এই পৃবীবির কি কাজ করে নিবেন? কাকে দিয়ে কীভাবে এই পৃথীবি সাজাবেন?
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
“যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে কাজ সহজ।” ( বুখারী হা/৪৯৪৯; মুসলিম হা/২৬৪৭; মিশকাত হা/৮৫।)
এই হাদিস প্রমাণ করে যে আল্লাহ যদি আপনাকে ব্যবসায়ী বা সাহিত্যিক বা প্রকৌশলী বানাতে চায়, সেটাই আপনার কাছে সহজ হবে, আর তাতে শ্রম দিলে আপনি তা পারবেন। তাহলে আমাদের লক্ষ্য অন্যরা কেন নির্ধারণ করবে। প্রিয়জনরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করবে। নিজেকে জানতে বা আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে যে আল্লাহ আমাকে কি কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন? কিন্তু লক্ষ্য নির্ধারণ করার অধিকার আল্লাহ আমাদের পিতাকে দেয়নি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করে থাকেন কিন্তু সে সম্ভাবনা আমরা আবিষ্কার করতে পারি না বলে আমাদের কিছুই করা হয়ে ওঠে না।
আপনার হয়তো রাজনীতিক হওয়ার কথা বা সেটা আপনার জন্য সহজ ছিল কিন্তু ডাক্তার হতে যেয়ে জীবনে কিছুই করা হয়ে ওঠেনি।
আপনার হয়তো লেখক হওয়ার কথা বা সেটা আপনার জন্য সহজ ছিল কিন্তু রাজনীতিক হতে যেয়ে জীবনে কিছুই করা হয়ে ওঠেনি।
সুতরাং নিজেকে আবিষ্কার করুন যে আল্লাহ কোন কাজ আপনার জন্য সহজ করেছে।
কি ধরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত?
যত দিন না আমারা একমুখী চাকুরির স্বপ্ন বা লক্ষ্যের মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে না আসব ততো দিন পর্যন্ত আমাদের দেশের উন্নতি হবে না। এখন যে উন্নতি হয় সেটা হল-“খেতে হলে কাজ করতে হবে” এই উদ্যোগের ফলে যে টুকু কাজ হচ্ছে তার ফলে যে টুকু উন্নতি।
আমাদের বহুমুখী স্বপ্ন বা লক্ষ্যের অধিকারী হতে হবে। সবাইকে শুধু ডাক্তার বা সরকারি চাকুরির লক্ষ্য নির্ধারণ করলে হবে না। এতে অন্য সেক্টরগুলো দুর্বল হয়েই থাকবে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত-
-আমি ব্যবসায়ী হব।
-আমি একজন ভালো শিক্ষক হব।
-আমি একজন ভালো রাজনীতিক হব।
-আমি একজন ভালো প্রশাসক হব।
-আমি একজন সমাজ সংস্কারক হব।
-আমি একজন ধর্ম দার্শনিক বা পন্ডিত হব।
-আমি সেবামুখী বেসরকারী হাসপাতালের মালিক হব।
-আমি শিল্পী বা সাহিত্যিক হব।
-আমি চাকুরী করে,টাকা জমিয়ে ব্যবসা শুরু করব।
-আমি গার্মেন্টস এ চাকুরী করে অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজেই একটি ছোট গার্মেন্টস দিব।
-আমি মার্কেটিং সেক্টরে চাকুরী করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজের পণ্য বাজারজাত করা শুরু করব।
-আমি অনলাইন ব্যবসা করব।
-আমি ফ্রিল্যান্সার হব
-আমি অনলাইন ব্লগার হব।
এধরনের অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
লক্ষ্য নির্ধারণ ও কাজ শুরু করা
প্রথমে নিজেকে জানুন যে কোন কাজ আপনার সাথে যায়। অতঃপর যে কাজ করেত চান সে সম্পর্কে জনুন। এই কাজের ব্যপারে যারা সফল ও অভিজ্ঞ তাদের সাথে পরামর্শ করে কাজ শুরু করতে পারেন।
আপনার ব্যর্থতা আসবে এতে দুর্বল হলে চলবে না। এতে আপনার অভিজ্ঞতা হবে। ফলে সফলতার নানা পথ আপনার পরিষ্কার হতে থাকবে। এভাবে একসময় আপনার সফলতা আসবে। আপনি যদি মুদি ব্যবসায়ী হতে চান সে ক্ষেত্রে কোন ব্যর্থতা আসবে না। আর বড় কিছু চাইলে নানা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে যা কেবল ব্যর্থতা থেকেই অর্জিত হয়।
“যে কাজ করে তার কোন ব্যর্থতা নাই কারণ হয় সে সফল হবে অথবা ব্যর্থ হবে। আর ব্যর্থ হলে সে শিখবে-ফলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
ইসলামে লক্ষ্য নির্ধারণের বা সিন্ধান্ত নেবার দুটি উপায় আছে যা পরবর্তীতে আলোচনা করা হয়েছে।
লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কর্ম পরিকল্পনা
আপনি যদি সাহিত্যিক হতে চান-সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় সাধনার ব্যাপার। বেশির ভাগ সাহিত্যিক সফল হোন মধ্য বয়সে এসে। তাই আপনার উচিত হবে শিক্ষকতা বা সাংবাদিকতা করে জীবিকা নির্বাহ করা। পাশাপাশি সাহিত্য সাধনা করে যাওয়া। যদি অভাব থাকে সে ক্ষেত্রে আপনার সৃজনশীলতা ধবংস হয়ে যাবে। হুমায়ূন আহমেদ একজন শিক্ষক ছিলেন। আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন নামকরা সাংবাদিক।
যদি বড় ব্যবসায়ী হতে চান তাহলে আপনার একটি ছোট অর্থনৈতিক উৎস থাকা উচিত নিজে চলার জন্য। কারণ বড় ব্যবসায়ী হতে চাইলে অনেক সময় প্রয়োজন আর অনেক ব্যর্থতার স্বীকার হওয়া লাগতে পারে। যদি স্ত্রী বা স্বামী বা পরিবার থেকে অর্থ আসে তাহলে তো হলই। আর তা না হলে খন্ডকালীন বা পার্টাইম কিছু করতে হবে। নইলে অভাবের কারণে কর্ম দক্ষতা কমিয়ে যেতে পারে।
মানুষ বলে আপনি পারবেন না। কিন্তু আল্লাহ বলে, তুমি চাও, আমি দিব। তাঁর কাছে সবই সম্ভব
প্রতি রাত্রে শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব।’ (সহীহ : বুখারী ১১৪৫, মুসলিম ৭৫৮।)
আল্লাহ যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদণ্ডআপদ দূরীভূত করেন। (সূরা নামল ৬২)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রভু লজ্জাশীল অনুগ্রহপরায়ণ, বান্দা যখন তাঁর কাছে দুই হাত তোলে, তখন তা শূন্য ও নিরাশভাবে ফিরিয়ে দিতে বান্দা থেকে লজ্জা করেন। (আবুদাঊদ ১৪৯০, তিরমিযী ৩৫৫৬)
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহর কাছে দু‘আ বা প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত হন। (আহমাদ ৯৬৯৯, তিরমিযী ৩৩৭৩, ইবনে মাজাহ ৩৮৭২)
যার কোন স্বপ্ন বা লক্ষ্য নাই তার আল্লাহর কাছে প্রার্থনার প্রয়োজন পড়ে না।
দেশ পরিবর্তনের চিন্তা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরাই বেশি দেখে থাকে
আমাদের সমাজকে অর্থনৈতিক অবস্থানের দিক দিয়ে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যেমন উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত।
উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন বলতে তেমন কিছুই না। কারণ তারা যা চায়, তাদের পিতা আলাদীনের মতো তাই নিয়ে হাজির হয়। তারা কোন বৈশম্যের স্বীকার হয় না। ফলে সমাজ ও অর্থনীতি পরিবর্তনের কোন স্বপ্ন তাদের মাথায় আসে না। (তবে এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে।)
আর নিম্নবিত্ত পরিবারের-এদের স্বপ্ন কি তা সবার জানা। (তবে এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে।)
মূলত দেশ পরিবর্তনের চিন্তা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরাই বেশি দেখে থাকে। কারণ তারা নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈশম্যের স্বীকার হয়। ফলে তারা অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখে নিজের ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু আমাদের প্রিয় স্বৈরাচার বড় কর্তার কারণে সব সব ধবংস হয়ে যায়। ফলে দেশ এগুতে পারছে না। সবাই যদি স্বপ্ন পরিচর্যা করার সুযোগ পেত, তাহলে কোন না কোন পথ বের হত, ফলে সবার বা ৫০ভাগ স্বপ্ন পূরণ হত। এভাবে দেশ এগিয়ে যেত।
আমাদের অর্থনৈতিক পরিবর্তন করার প্রধান মাধ্যম হলো-আমাদের পরিবারের বড় কর্তাদের মানিসিকতা পরিবর্তন করা। নেতিবাচক মানিসিকতা পরিবর্তন করে ইতিবাচক মানিসিকতা ধারণ করতে হবে। সরকার যুবকদের উন্নয়ন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের উচিত এসব বন্ধ করে, আমাদের মনোজ্ঞ ও মনঃচিকিৎসকদের দিয়ে সমাজের ইতিবাচক মানিসিকতা পরিবর্তনে কাজ করানো। ব্যস! কেল্লাফতে সব হবে, এইটা করলে।
তুই পারবি না-তত্ত্ব
কেউ স্বপ্ন দেখলে আমাদের প্রিয় কানা পন্ডিতগণ দর্শন দেন, “তুই পারবি না”
ওহে, প্রিয় কানা পন্ডিত, তুমি কি আমার আল্লাহ, তুমি কি আমার ভাগ্যের লেখক। আমার ভাগ্যের লেখক আমার আল্লাহ। আমি কি পারব আর কি পারব না, সেটা তিনিই কেবল জানেন। তুমি কে? আমার আল্লাহ চাইলে মূহর্তের মধ্যের আমার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
আল্লাহ চায় যে, তার বান্দা তাঁর কাছে চাক, তিনি এটা ভীষণ পছন্দ করেন। না চাওয়াটা তাঁর মোটেই পছন্দ নয়। চাইলে তিনি দিবিনই।
আজ ইউরোপ আজ উন্নত। কারণ তারা চায়। তাদের বড় স্বপ্ন আছে বলে।
বলছিলাম না- তুই ব্যর্থ হবি তত্ত্ব
কেই স্বপ্ন পূরণ করতে কাজে নেমে ব্যর্থ হলে, আমাদের প্রিয় কানা পন্ডিতগণ নতুন তও্ব দেন, বলছিলাম না, “তুই ব্যর্থ হবি”
এই মূর্খরা জানে না যে সফলতার প্রধান উপাদান হলো- ব্যর্থতার ফলে অর্জিত অভিজ্ঞতা। ‘অভিজ্ঞতা” কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক লোন দেয় না। এটা নিজেকে অর্জন করতে হয়।
কেউ একবার ব্যর্থ হলো মানে সফলতার একটি সিঁড়ি অতিক্রম করল। এই রকম অনেক ব্যর্থতা আসবে। আপনি যদি জীবনে কোন সফলতা নাও পান, তাতে হতাশ হবেন না। কেননা আপনার পরিচিত বা পরিবারের কেউ না কেউ এটা অনুসরণ করে সফল হবে। কারণ আপনি শুরু করেছিলেন বিধায় অন্যরা এই পথ চিনেছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ যার ভাল চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। ( বুখারী হা/৫২১৩)
এই কানা পন্ডিতগণ আবার তত্ত্ব দিবে যে, কতই তো দেখলাম তোকে, কিছুই করতে পারলি না। কোন যোগ্যতা আছে তোর?
কেন যে কাটা ঘায়ে লবণ ছিটাতে এরা এত মজা পায় তা আমার বুঝে আসে না। কেউ এই মানিসিকতার উপর পিএইচডি গবেষণা করলে, এই হীন মানিসিকতার কারণ ও সমাধান বের হতে পারে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
আল্লাহ যখন কনো সমপ্রদায়কে ভালোবাসেন তখন তাদের কে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে এতে সন্তষ্ট থাকে তার জন্য (আল্লাহর) সন্তষ্টিই রয়েছে। আর যে অসন্তষ্ট হয় তার জন্য (গযব) রয়েছে। (তিরমিযী হা/২৩৯৬)
তাক্বদীর বা ভাগ্যে ভুল বিশ্বাস যখন সফলতার প্রধান বাধা
অনেকে মনে করে কর্মই সব, ভাগ্য বলে কিছুই নেই। আবার কেউ কেউ কাজ ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে,
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা বাতিল করেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন, আর তাঁর কাছেই আছে ‘উম্মুল কিতাব’। [সুরা : রাদ, আয়াত : ৩৯]
তাফসির : আলোচ্য আয়াতের মূলকথা হলো, আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত ফলকে সৃষ্টিজগতের সব কিছুর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। আল্লাহ চাইলে তাঁর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনেন কিংবা ভাগ্যলিপি অনুযায়ী তা বহাল রাখেন। এ আয়াতের অধীনে তাফসিরবিদরা তাকদির বা ভাগ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তাকদির সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক. অপরিবর্তনীয়। দুই. পরিবর্তনশীল। যেমন—পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)। এ আয়াতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রাণীকেই মরতে হবে। সৃষ্টিতে আল্লাহর এ নীতিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন নেই। এটা অপরিবর্তনীয় ভাগ্য। তবে কোন প্রাণী কখন মরবে, তা আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু আগে-পরে হতে পারে। এটা পরিবর্তনশীল ভাগ্য। তাই ভাগ্যের কিছু অংশ পরিবর্তনশীল থাকে। এ বিষয়টি আলোচ্য আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা তা বাতিল করেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন।’
‘আকাশ সমূহে ও পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই আল্লাহর কাছে প্রার্থী। তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত’ (আর-রহমান ৫৫/২৯)।
আল্লাহ্ বলেন, আল্লাহ্ যার জন্যে ইচ্ছা তার জীবনের উপকরণ বাড়ান ও যার জন্য ইচ্ছা তা কমান। (সূরা রাদ, আয়াত ২৬)।
অর্থাৎ ভাগ্য পরিবর্তন হয়। ভাগ্য পরিবর্তন করতে নবী (সাঃ) কিছু মাধ্যম বা উপায় শিক্ষা দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘আল্লাহর ফায়ছালাকে কোন বস্ত্ত পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না দো‘আ ব্যতীত’। অর্থাৎ দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়। [তিরমিযী হা/২১৩৯; মিশকাত হা/২২৩৩; ছহীহাহ হা/১৫৪।]
আল্লাহ স্বীয় ফায়ছালার পরিবর্তন করেন যখন বান্দা তাঁর নিকটে দো‘আ করে। ছহীহ হাদীছে রয়েছে যে রক্ত সম্পর্ক রক্ষাকারীর আয়ু বৃদ্ধি পায়।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার রূযী বৃদ্ধি হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘায়িত হোক সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে’।[বুখারী হা/৫৯৮৬; মুসলিম হা/২৫৫৭; মিশকাত হা/৪৯১৮।]
উক্ত আয়াত ও হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, দো‘আ ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে রিযক্ব ও আয়ু বৃদ্ধি পায়।
তাক্বদীর নিয়ে বিতর্ক করা :
তাক্বদীরের উপর ঈমান রাখা আবশ্যক। তাক্বদীর নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ এ বিতর্ক অনেক ক্ষেত্রে কুফরী ও নাস্তিকতার পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বের হয়ে আমাদের নিকট আসলেন আমরা তখন তাক্বদীর সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের উপর এত রাগ করলেন যে, রাগে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চেহারা মোবারক লাল হয়ে গেল, যেন তাঁর গন্ডদেশে আনারের দানা নিংড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি বললেন, তোমাদেরকে কি এ বিষয়ে হুকুম করা হয়েছে, না কি আমি এ নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ বিষয়ে বির্তকে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে তোমাদেরকে বলছি, তোমরা এ বিষয়ে কখনো যেন বিতর্কে লিপ্ত না হও’।[তিরমিযী হা/২১৩৩; মিশকাত হা/৯৮, সনদ হাসান।]
‘আকাশ সমূহে ও পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই আল্লাহর কাছে প্রার্থী। তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত’ (আর-রহমান ৫৫/২৯)।
তাফসীরে ইবনে কাছীরে ‘শান’-এর ব্যাখায় বলেন, আল্লাহর শান হ’ল যে তাঁকে ডাকবে তার ডাকে সাড়া দেওয়া, যে তাঁর কাছে চায় তাকে দান করা। অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করা। গুনাহগার ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করা। সমস্ত যমীনবাসী ও আকাশবাসীর প্রতিদিনের প্রয়োজন পূরণ করা। ইবনে জারীরের বরাতে ইবনে কাছীর বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তখন ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ শান কি? তিনি বললেন, গুনাহ সমূহকে ক্ষমা করা, দুঃখ-কষ্ট দূর করা, মানুষের উন্নতি অবনতি করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশ যখন বাকী থাকে তখন আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে নেমে এসে বলেন, কে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে চায় আমি তাকে দান করব? কে আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করব’। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য বান্দার অভিযোগ পুরা করেন। ফলে কারো রূযী বেড়ে যায় কারো রূযী কমে যায়। কারো হায়াত বৃদ্ধি পায়, কারো কমে যায়। কেউ তওবা করে পাপের পথ পরিহার করে। এসব কাজ প্রতি দিনের ভাগ্যের অন্তর্ভুক্ত।