সফলতার মূল রহস্য হলো-“নিজেকে জানো” বা Know thyself. বিজ্ঞান ও ইসলামে এই বিষয়ে মৌলিক আলোচনা করেছে। এই প্রবন্ধ পড়লে আপনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন…………… চলুন জানা যাক।
আমাদের অধিকাংশ মানুষ ব্যর্থ কারণ আল্লাহ আমাদেরকে যে সম্ভাবনা, প্রতিভা ও বিশেষত্ব দিয়েছেন তা আবিষ্কার করে-তার উপর ভিত্তি করে কাজ করিনা। তিনি একেকজনকে একেক সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি সবাইকে একই সম্ভাবনা, প্রতিভা ও বিশেষত্ব দেননি। তিনি যদি সবাইকে ডাক্তার হওয়ার সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করতেন। তাহলে সবাই ডাক্তার হতো। ফলে অন্য সব সেক্টর ফাঁকা হয়ে যেত। এতে পৃথিবী ধবংস হয়ে যেত।
আল্লাহ একেকজনকে একেক সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেন
আল্লাহ একেকজনকে একেক সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেন।তিনি কাউকে নেতা হওয়ার সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেন। তিনি কাউকে ব্যবসায়ী হওয়ার বিশেষত্ব দেন।তিনি কাউকে লেখক হওয়ার প্রতিভা দেন। তিনি কাউকে বিজ্ঞানী হওয়ার সম্ভাবনা দেন। তিনি কাউকে দার্শনিক হওয়ার গুণ দেন। তিনি কাউকে শিল্পী হওয়ার যোগ্যতা দেন।তিনি কাউকে যুদ্ধা হওয়ার শক্তি দেন।তিনি একেকজনকে দিয়ে পৃথিবীর একেক সেক্টরকে সাজাতে চেয়েছেন।
আল্লাহ আমাদের অনেকেকে লেখক হওয়ার প্রতিভা দেয়। কিন্ত সব-লেখকের সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতা একই রকম নয়। তিনি অনেককে বিজ্ঞানী হওয়ার প্রতিভা দিতে পারেন। কিন্ত তিনি সব-বিজ্ঞানীকে একই মেধা দেন না।
সৃষ্টির মধ্যে আপনি এক অনন্য সৃষ্টি; কেউ আপনার মতো নয় এবং আপনি অন্য কোনও ব্যক্তির মতো নন। কারণ আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন।
ইসলামে নিজেকে জানুন ( Know thyself)
মহান আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتٰ
“তোমাদের প্রচেষ্টা অবশ্যই বৈচিত্র্যময়।” (৯২-সূরা আল লাইল: আয়াত-৪)
অর্থাৎ আমাদের কাজ, পছন্দ ও রুচির নানা পার্থক্য থাকবে। ফলে কেউ ডাক্তার হতে চাইবে, কেঊ লেখক হতে চাইবে, কেউ ব্যবসায়ী হতে চাইবে, কেউ রাজনীতিক হতে চাইবে। এই ভিন্নতা আল্লাহরই বিশেষ সৃষ্টি। মানুষের মাঝে কর্ম নিয়ে যদি আল্লাহ ভিন্নতা সৃষ্টি না করতেন তাহলে সব মানুষ একই কাজ করতো।
ভাগ্যের উপর কর্ম ছেড়ে দিয়ে ও হাত গুটিয়ে বসে থাকাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করে বলেন, না তোমরা ’আমল বা কাজ করতে থাক। কারণ, যাকে যে ’আমল বা কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে ’আমলক বা কাজকে সহজ করে দেয়া হবে।(বুখারী হা৪৯৪৭।)
এই হাদীস প্রমাণ করে যে আল্লাহ সব মানুষকে প্রতিভা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তবে তিনি সে প্রতিভার মাঝে ভিন্নতা সৃষ্টি করেছেন।
Know thyself নিয়ে উক্তি
ডা. জেমস গর্ডন গিলকী বলেছেন- পরিচয়ের অভাবের সমস্যা বা সংকটের উৎপত্তি প্রাগৈতিহাসিক যুগে এবং এটি সকল মানুষের জন্য সাধারণ। একইভাবে, ব্যক্তিগত পরিচয়ের অভাব একটি সমস্যা এবং অনেক ভারসাম্যহীনতা এবং ব্যক্তিগত সমস্যার কারণ।
শিশু শিক্ষা বিষয়ে এনজেলো ব্যাটারো (Angelo Battero) তেরোটি বই ও হাজার হাজার প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি একবার লিখেছেন- “যে ব্যক্তি নিজের মতো বড় না হয়ে অন্যের আকৃতি ও চিন্তা-চেতনার অনুকরণে বড় হয়েছে তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই।”
প্রত্যেকেরই নিজস্ব ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, প্রতিভা এবং ক্ষমতা রয়েছে, তাই কারও ব্যক্তিত্বকে অন্যের সাথে একত্রিত করা উচিত নয়। আপনি যদি নিজেকে বুঝতে এবং জানতে চান। তবেই আপনি জানতে পারবেন আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কী।
ইমারসন তার আত্মবিশ্বাস বা স্ব-নির্ভরতা বিষয়ক প্রবন্ধে বলেছেন- এমন সময় আসবে যখন একজন ব্যক্তির জ্ঞান এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে সে বিশ্বাস করবে হিংসা মূর্খতা এবং অনুকরণ আত্মহত্যা।
আপনার প্রতিভা পৃথিবীতে নতুন
যদিও সমগ্র পৃথিবী ভাল জিনিসে পরিপূর্ণ, তবুও কেউ তার নিজের জমিতে রোপণ ও চাষ না করা পর্যন্ত কিছুই অর্জন করতে পারে না। অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে যে সুযোগ-সুবিধা, প্রতিভা এবং বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন তার ভিত্তিতে আপনাকে কাজ করতে হবে, তবেই আপনি জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে নতুন প্রতিভা রয়েছে তা বিশ্বের জন্য নতুন। আল্লাহ আপনাকে যে সম্ভাবনা, প্রতিভা এবং বিশেষত্ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা অন্যকে তিনি দেননি। তিনি আপনাকে সেই সুযোগ, প্রতিভা এবং বিশেষাধিকার দেননি যা তিনি অন্যদের দিয়েছেন। যেমনঃ আল্লাহ উইলিয়াম শেক্সপিয়ার যে প্রতিভা দিয়েছিলেন তা থমাস এডিসন ও আলবার্ট আইনস্টাইন কে দেননি। তিনি থমাস এডিসন ও আলবার্ট আইনস্টাইন কে যে প্রতিভা দিয়েছিলেন তা আব্রাহাম লিঙ্কন ও বিল গেটস কে দেননি। তিনি আব্রাহাম লিঙ্কন কে যে প্রতিভা দান করেছিলেন, যা তিনি বিল গেটস কে দেননি।
কেন আমরা আমাদের প্রতিভাকে তুচ্ছ করে ছুড়ে ফেলি? সবচেয়ে দুঃখজনক তারা যারা তাদের রূপ পরিত্যাগ করে এবং অন্যদের অনুকরণ করার চেষ্টা করে। নিজেকে অধ্যয়ন করে, আপনি আপনার সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। যারা তাদের সম্ভাবনার ভিত্তিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সক্ষম তারা জীবনে সফল।
আপনার যদি কৃষি কাজ করার প্রতিভা থাকে তাহলে চাষাবাদ করবেন। আপনার দ্বারা কৃষিতে বিপ্লব ঘটতে পারে। আপনার যদি দর্জির কাজের প্রতিভা থাকে তাহলে দর্জিকে পেশা হিসেবে নিন। আমি কিছু মানুষকে চিনি যারা দর্জি থেকে গার্মেনেন্টস এর মালিক হয়েছেন।
টমাস বাটা কেন সফল হলেন? কারণ জানেন কি?
আপনার যদি মুচির কাজে প্রতিভা থাকে। তাহলে মুচির পেশা হিসেবে নেন। আজকের যে বিখ্যাত বাটা ব্রান্ড দেখছেন, তার প্রতিষ্ঠাতা টমাস বাটা ছিলেন একজন মুচি। তার বাপ-দাদা সবাই ছিলেন দক্ষ চর্মকার। ৬ বছর বয়স থেকে বাবার কাছে চামড়ার কাজ শিখতে শুরু করেন টমাস। ১২ বছর বয়সেই টমাস জুতো তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
ছেলে থমাসের জন্ম চেকোস্লোভাকিয়ায়।
মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান। তার বাবা ও দাদারা সবাই দক্ষ ট্যানার ছিলেন। থমাস ৬ বছর বয়সে তার বাবার কাছ থেকে চামড়ার কারুশিল্প শিখতে শুরু করেন। ১২ বছর বয়সে, থমাস জুতা তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, কিন্তু এই ছেলেটির আরেকটি স্বপ্ন ছিল। ১২ বছর বয়সে, ছেলেটি তার দাদা আন্তোনিন এবং বড় বোন আনাকে বুঝিয়েছিল যে আমার তিন ভাইবোন এবং আমার একটি ছোট দোকানে কয়েকটি জুতা বিক্রি করার পরিবর্তে একটি জুতার কোম্পানি শুরু করা উচিত। তিন ভাইবোন শুধুমাত্র $ 320 বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে, তিনি একটি জুতা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
তিন ভাইবোন ব্যর্থ হলেন।
মাত্র ১০ জন কর্মচারী ছিল এমন সংস্থাটি এক বছরের মধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছে। জুতার চামড়া কেনার টাকা ছিল না। অন্য যে কেউ এটি সেখানে শেষ করতে পারতো, কিন্তু টমাস সেখানে শুরু. তিনি বললেন: চামড়া না থাকলে ক্যানভাস থেকে জুতা বানাবো। উৎপাদন খরচ কম, তাই দাম সস্তা হবে। বিশ্বের প্রথম ক্যানভাস জুতা (যাকে আমরা কেডস বলি) তৈরি করা হয়েছিল এবং জুতাগুলি বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল! এক বছরের মধ্যে থমাসের কোম্পানী তার ঋণ পরিশোধ থেকে উদ্ধার!
টমাস বাটার জীবনে know thyself চর্চা
একদিন দেখা গেল কারখানা থেকে গাড়ির ডিলারশিপে যাওয়ার পথে একটা জুতার বাক্স চুরি হয়ে গেছে! সবাই টমাসকে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের পরামর্শ দিল। প্রথমে বাম পায়ের সব জুতা পাঠাতে বললেন তারপর দুই দিন পরে ডান পায়ের সব জুতা! রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেল জুতা চুরি! তিনি অদ্ভুতভাবে তার জুতার দাম ৯ নম্বর দিয়ে শেষ করেছিলেন, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি ১০০ এর পরিবর্তে ৯৯ লিখলে ক্রেতারা বলবে যে আমি একশ টাকা কম পেয়েছি। এই ঐতিহ্য আজও চলছে!
থমাস ১৯৩২ সালে সুইজারল্যান্ডে কোম্পানির একটি শাখা খোলার সময় একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। এবং কি আশ্চর্যজনক: তার জুতা কোম্পানি যা ৭২ টি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমরা সবাই মি. টমাসের জুতা পড়ি। এই থমাস বাটা জুতা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, টমাস বাটা।
আমরা মনে করি Mr. A ব্যবসায়ী হিসেবে সফল হয়েছে। আমরাও সফল হব। সে যদি পারে, আমরাও পারব। সেও মানুষ, আমরাও মানুষ। এই ধারণা ভুল। কারণ আল্লাহ হয়তো আপনকে বিজ্ঞানী অথবা লেখক অথবা রাজনীতিক হওয়ার প্রতিভা দিয়েছেন। তাই নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। তিনি আপনাকে যে প্রতিভা দিয়েছেন তা আবিষ্কার করুন। আপনার প্রতিভার উপর ভিত্তি করে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনার প্রতিভাকে কাজে লাগান। আপনি সহজেই সফল হবেন।
Leave a Reply