মনোবিজ্ঞান ও ইসলামে নিজেকে জানো (Know thyself) বিষয়ে তাত্বিক ও ব্যবহারিক আলোচনা করা হয়েছে। আসুন আমরা এই বই বা দীর্ঘ প্রবন্ধের মাধ্যমে নিজেকে জানো (Know thyself) বিষয়ে বিস্তারিতা জানিঃ
আল্লাহ একেকজনকে একেক সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেন
আমাদের অধিকাংশ মানুষ ব্যর্থ কারণ আল্লাহ আমাদেরকে যে সম্ভাবনা, প্রতিভা ও বিশেষত্ব দিয়েছেন তা আবিষ্কার করে-তার উপর ভিত্তি করে কাজ করিনা। তিনি একেকজনকে একেক সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি সবাইকে একই সম্ভাবনা, প্রতিভা ও বিশেষত্ব দেননি। তিনি যদি সবাইকে ডাক্তার হওয়ার সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করতেন। তাহলে সবাই ডাক্তার হতো। ফলে অন্য সব সেক্টর ফাঁকা হয়ে যেত। এতে পৃথিবী ধবংস হয়ে যেত।
আল্লাহ একেকজনকে একেক সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেন।তিনি কাউকে নেতা হওয়ার সম্ভাবনা দিয়ে সৃষ্টি করেন। তিনি কাউকে ব্যবসায়ী হওয়ার বিশেষত্ব দেন।তিনি কাউকে লেখক হওয়ার প্রতিভা দেন। তিনি কাউকে বিজ্ঞানী হওয়ার সম্ভাবনা দেন। তিনি কাউকে দার্শনিক হওয়ার গুণ দেন। তিনি কাউকে শিল্পী হওয়ার যোগ্যতা দেন।তিনি কাউকে যুদ্ধা হওয়ার শক্তি দেন।তিনি একেকজনকে দিয়ে পৃথিবীর একেক সেক্টরকে সাজাতে চেয়েছেন।
সৃষ্টির মধ্যে আপনি এক অনন্য সৃষ্টি; কেউ আপনার মতো নয় এবং আপনি অন্য কোনও ব্যক্তির মতো নন। কারণ আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে Know thyself
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন রকমের।” (৯২-সূরা আল লাইল: আয়াত-৪)
অর্থাৎ আমাদের কাজ, পছন্দ ও রুচির নানা পার্থক্য থাকবে। ফলে কেউ ডাক্তার হতে চাইবে, কেঊ লেখক হতে চাইবে, কেউ ব্যবসায়ী হতে চাইবে, কেউ রাজনীতিক হতে চাইবে। এই ভিন্নতা আল্লাহরই বিশেষ সৃষ্টি। মানুষের মাঝে কর্ম নিয়ে যদি আল্লাহ ভিন্নতা সৃষ্টি না করতেন তাহলে সব মানুষ একই কাজ করতো।
ভাগ্যের উপর কর্ম ছেড়ে দিয়ে ও হাত গুটিয়ে বসে থাকাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করে বলেন, না তোমরা ’আমল বা কাজ করতে থাক। কারণ, যাকে যে ’আমল বা কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে ’আমলক বা কাজকে সহজ করে দেয়া হবে।(বুখারী হা৪৯৪৭।)
এই হাদীস প্রমাণ করে যে আল্লাহ সব মানুষকে প্রতিভা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তবে তিনি সে প্রতিভার মাঝে ভিন্নতা সৃষ্টি করেছেন।
নিজেকে জানো (Know thyself) নিয়ে উক্তি
ডা. জেমস গর্ডন গিলকী ( Dr. James Gordon Gilkee) বলেছেন- “আত্ম পরিচিতির অভাবের সমস্যা বা সংকট প্রাগৈতিহাসিক এবং এটা সকল মানুষের বেলায় একই রকমের; একই রকমভাবে আত্মপরিচয়ের অভাবহীনতাও একটি সমস্যা, যা বহু ব্যক্তিগত ভারসাম্যহীনতা ও সমস্যার উৎস।
শিশু শিক্ষা বিষয়ে এনজেলো ব্যাটারো (Angelo Battero) তেরোটি বই ও হাজার হাজার প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি একবার লিখেছেন- “যে ব্যক্তি নিজের মতো বড় না হয়ে অন্যের আকৃতি ও চিন্তা-চেতনার অনুকরণে বড় হয়েছে তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই।”
প্রত্যেকেরই নিজস্ব ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, প্রতিভা এবং ক্ষমতা রয়েছে, তাই কারও ব্যক্তিত্বকে অন্যের সাথে একত্রিত করা উচিত নয়। আপনি যদি নিজেকে বুঝতে এবং জানতে চান। তবেই আপনি জানতে পারবেন আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কী।
ইমারসন এক প্রবন্ধে বলেছেন- “এমন এক সময় আসবে যখন মানুষের জ্ঞান এমন স্তরে পৌছবে যেখানে তার বিশ্বাস জন্মাবে যে, হিংসা হলো মূর্খতা এবং অনুকরণ হলো আত্মহত্যার শামিল।
যদিও সমগ্র পৃথিবী ভাল জিনিসে পরিপূর্ণ, তবুও কেউ তার নিজের জমিতে রোপণ ও চাষ না করা পর্যন্ত কিছুই অর্জন করতে পারে না। অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে যে সুযোগ-সুবিধা, প্রতিভা এবং বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন তার ভিত্তিতে আপনাকে কাজ করতে হবে, তবেই আপনি জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
তাঁহাদের প্রতিভার ভিন্নতা
প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে নতুন প্রতিভা রয়েছে তা বিশ্বের জন্য নতুন। আল্লাহ আপনাকে যে সম্ভাবনা, প্রতিভা এবং বিশেষত্ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা অন্যকে তিনি দেননি। তিনি আপনাকে সেই সুযোগ, প্রতিভা এবং বিশেষাধিকার দেননি যা তিনি অন্যদের দিয়েছেন। যেমনঃ আল্লাহ উইলিয়াম শেক্সপিয়ার যে প্রতিভা দিয়েছিলেন তা থমাস এডিসন ও আলবার্ট আইনস্টাইন কে দেননি। তিনি থমাস এডিসন ও আলবার্ট আইনস্টাইন কে যে প্রতিভা দিয়েছিলেন তা আব্রাহাম লিঙ্কন ও বিল গেটস কে দেননি। তিনি আব্রাহাম লিঙ্কন কে যে প্রতিভা দান করেছিলেন, যা তিনি বিল গেটস কে দেননি।
কেন আমরা আমাদের প্রতিভাকে তুচ্ছ করে ছুড়ে ফেলি? সবচেয়ে দুঃখজনক তারা যারা তাদের রূপ পরিত্যাগ করে এবং অন্যদের অনুকরণ করার চেষ্টা করে। নিজেকে অধ্যয়ন করে, আপনি আপনার সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। যারা তাদের সম্ভাবনার ভিত্তিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সক্ষম তারা জীবনে সফল।
আপনার প্রতিভাকে ছোট মনে করবেন না
আপনার যদি কৃষি কাজ করার প্রতিভা থাকে তাহলে চাষাবাদ করবেন। আপনার দ্বারা কৃষিতে বিপ্লব ঘটতে পারে। আপনার যদি দর্জির কাজের প্রতিভা থাকে তাহলে দর্জিকে পেশা হিসেবে নিন। আমি কিছু মানুষকে চিনি যারা দর্জি থেকে গার্মেনেন্টস এর মালিক হয়েছেন। আপনার যদি মুচির কাজে প্রতিভা থাকে। তাহলে মুচির পেশা হিসেবে নেন। আজকের যে বিখ্যাত বাটা ব্রান্ড দেখছেন, তার প্রতিষ্ঠাতা টমাস বাটা ছিলেন একজন মুচি। তার বাপ-দাদা সবাই ছিলেন দক্ষ চর্মকার। ৬ বছর বয়স থেকে বাবার কাছে চামড়ার কাজ শিখতে শুরু করেন টমাস। ১২ বছর বয়সেই টমাস জুতো তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
ছেলে থমাসের জন্ম চেকোস্লোভাকিয়ায়।
মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান। তার বাবা ও দাদারা সবাই দক্ষ ট্যানার ছিলেন। থমাস ৬ বছর বয়সে তার বাবার কাছ থেকে চামড়ার কারুশিল্প শিখতে শুরু করেন। ১২ বছর বয়সে, থমাস জুতা তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, কিন্তু এই ছেলেটির আরেকটি স্বপ্ন ছিল। ১২ বছর বয়সে, ছেলেটি তার দাদা আন্তোনিন এবং বড় বোন আনাকে বুঝিয়েছিল যে আমার তিন ভাইবোন এবং আমার একটি ছোট দোকানে কয়েকটি জুতা বিক্রি করার পরিবর্তে একটি জুতার কোম্পানি শুরু করা উচিত। তিন ভাইবোন শুধুমাত্র $ 320 বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে, তিনি একটি জুতা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিন
তিন ভাইবোন ব্যর্থ হলেন।
মাত্র ১০ জন কর্মচারী ছিল এমন সংস্থাটি এক বছরের মধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছে। জুতার চামড়া কেনার টাকা ছিল না। অন্য যে কেউ এটি সেখানে শেষ করতে পারতো, কিন্তু টমাস সেখানে শুরু. তিনি বললেন: চামড়া না থাকলে ক্যানভাস থেকে জুতা বানাবো। উৎপাদন খরচ কম, তাই দাম সস্তা হবে। বিশ্বের প্রথম ক্যানভাস জুতা (যাকে আমরা কেডস বলি) তৈরি করা হয়েছিল এবং জুতাগুলি বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল! এক বছরের মধ্যে থমাসের কোম্পানী তার ঋণ পরিশোধ থেকে উদ্ধার!
একদিন দেখা গেল কারখানা থেকে গাড়ির ডিলারশিপে যাওয়ার পথে একটা জুতার বাক্স চুরি হয়ে গেছে! সবাই টমাসকে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের পরামর্শ দিল। প্রথমে বাম পায়ের সব জুতা পাঠাতে বললেন তারপর দুই দিন পরে ডান পায়ের সব জুতা! রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেল জুতা চুরি! তিনি অদ্ভুতভাবে তার জুতার দাম ৯ নম্বর দিয়ে শেষ করেছিলেন, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি ১০০ এর পরিবর্তে ৯৯ লিখলে ক্রেতারা বলবে যে আমি একশ টাকা কম পেয়েছি। এই ঐতিহ্য আজও চলছে!
থমাস ১৯৩২ সালে সুইজারল্যান্ডে কোম্পানির একটি শাখা খোলার সময় একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। এবং কি আশ্চর্যজনক: তার জুতা কোম্পানি যা ৭২ টি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমরা সবাই মি. টমাসের জুতা পড়ি। এই থমাস বাটা জুতা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, টমাস বাটা।
আমরা মনে করি Mr. A ব্যবসায়ী হিসেবে সফল হয়েছে। আমরাও সফল হব। সে যদি পারে, আমরাও পারব। সেও মানুষ, আমরাও মানুষ। এই ধারণা ভুল। কারণ আল্লাহ হয়তো আপনকে বিজ্ঞানী অথবা লেখক অথবা রাজনীতিক হওয়ার প্রতিভা দিয়েছেন। তাই নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। তিনি আপনাকে যে প্রতিভা দিয়েছেন তা আবিষ্কার করুন। আপনার প্রতিভার উপর ভিত্তি করে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনার প্রতিভাকে কাজে লাগান। আপনি সহজেই সফল হবেন।
আপনার ছোট ছোট দক্ষতাকে মূল্য দিন
আপনি যদি মার্কেটিং এ ভালো হোন তবে বিক্রয় প্রতনিধি হিসেবে কোন কোম্পানীতে স্বল্প-বেতনে চাকুরি করবেন। যখন আপনি দক্ষ হবেন তখন যদি নিজের অথবা অন্যকে দিয়ে উৎপাদিত একটি ভালো মানের পণ্য দিয়ে সারা দেশে ব্যবসা শুরু করেন। আর ১৮ কোটি লোকের দেশে প্রতি মাসে ২০ হাজার পণ্য বিক্রি করতে পারেন আর প্রতি পণ্যে ১ টাকা করে লাভ করেন, তাহলে লাভ হবে ২০ হাজার টাকা। আমার এ কথা চাপাবাজি মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হল কতিপয় ব্যবসায়ী আমাদের ১৮ কোটি মানুষের সাথে ব্যবসা করে সব টাকা তাঁরা নিয়ে নিচ্ছে। যেমন আমরা সবাই সাবান ব্যবহার করি কিন্তু এই সাবানগুলো কয়টা কোম্পানি উৎপাদন করছে? হাতে গোনা কয়েকটা কোম্পানি এ কাজ করছে। আমরা প্রতি মাসে গড়ে একটি করে সাবান ব্যবহার করি আর তাঁরা যদি ১ টাকা করে লাভ করে, তাহলে আমরা প্রতি মাসে ১৮ কোটি টাকা মাত্র কয়েকটা কোম্পানীকে দিচ্ছি। এভাবে সব পণ্যগুলোর ব্যপারে ভেবে দেখুন। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন ১৮ কোটি লোকের দেশে কোন পণ্য আর কত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা দরকার? নেতিবাচক সমালোচনা না করে একটু ভাবুন। ইউরোপ আজ এতো উন্নত কেন? কারণ তারা বড় স্বপ্ন দেখে। সফলতার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক মানসিকতা ধারণ করে।
আল্লাহ কোন জাতির তাকদির (ভাগ্য) ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না সে জাতি নিজে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টা করে। (সূরায়ে রাদ-১১)
আমরা চাই না, আমদের বড় কোন স্বপ্ন নেই। ফলে আল্লাহ আমাদের দেয় না।
বহুমাত্রিক প্রতিভা
আমাদের সমাজে কিছু বহুমাত্রিক প্রতিভার মানুষ আছে। তবে এদের অধিকাংশই ব্যর্থ হয়। কারণ তারা একই সাথে সব প্রতিভার বিকাশের চেষ্টা করে। কেউ কেউ নিজের বহুমাত্রিক প্রতিভা নিয়ে অহংকার করে এবং হাত গুটিয়ে বসে থাকে । ফলে তারা ব্যর্থ হয়। তারা যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিভা বিকাশের চেষ্টা করত তাহলে তারা বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখতে পারত। ঐতিহাসিক কিছু ব্যক্তি আছে, যারা বহুমাত্রিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা (ক্যারিয়ারের ভিন্নতা) বিভিন্ন রকমের।” (৯২-সূরা আল লাইল: আয়াত-৪)
অর্থাৎ আমাদের কাজ, পছন্দ ও রুচির নানা পার্থক্য থাকবে। ফলে কেউ ডাক্তার হতে চাইবে, কেঊ লেখক হতে চাইবে, কেউ ব্যবসায়ী হতে চাইবে, কেউ রাজনীতিক হতে চাইবে। এই ভিন্নতা আল্লাহরই বিশেষ সৃষ্টি। মানুষের মাঝে কর্ম নিয়ে যদি আল্লাহ ভিন্নতা সৃষ্টি না করতেন তাহলে সব মানুষ একই কাজ করতো।
মটিভেশনাল বক্তব্য পরিহার করুন
প্রায় সব দেশে কিছু বক্তা আছে যাদের কাজ হলো মানুষদের মটিভেশন দেয়া। উন্নত দেশে এদের সংখ্যা বেশি। তাদের অনেকে এটা পেশা হিসেবে নিয়েছেন। অনলাইনে আপনি অনেক মটিভেশনাল লেকচার পাবেন। যারা মটিভেশনাল আলোচনায় অংশগ্রহন করেন,তাদের মধ্যে হয়তো ৫% লোক তাদের প্রতিভা আবিষ্কার করে, লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পেরেছেন। বাকী ৯৫% লোক নিজেদের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারিনি। এই সব মটিভেশনাল আলোচনায় অংশগ্রহনকারীর ৫% লোক উপকৃত হয়। বাকী ৯৫% লোক ভুল পথে পরিচালিত হয়। যারা নিজের প্রতিভা অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারিনি, এই সব মটিভেশনাল বক্তব্য শোনে, তারা তদের শ্রম ভুল পথে ব্যয় করে। তারা ব্যর্থ হবে-সেটাই স্বাভাবিক। ব্যর্থতার ফলে এই সব লোকেরা হতাশায় আক্রান্ত হয়। ব্যর্থতার ফলে অনেকে আত্নহত্যা পর্যন্ত করে। তাই এই বক্তাদের উচিত-“Know thyself” নিয়ে আলোচনা করা। “Know thyself” নিয়ে আলোচনার আয়োজন করলে, মানুষ নিজের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারবে। যখন মানুষ নিজের লুকিয়ে থাকা প্রতিভা আবিষ্কার করে, লক্ষ্য নির্ধারণ করে, কাজ করতে পারবে, তখন তারা সফল হতে পারবে-ইনশাআল্লাহ।
হিংসা একটি মূর্খতামি
আপনার বন্ধু সফল ব্যবসায়ী। তাই তাকে হিংসা করছেন। কিন্তু আপনি জানেন না, আল্লাহ হয়তো আপনাকে লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক বা অন্য কোন বিষয়ে প্রতিভা দান করেছেন। আপনি যদি নিজের প্রতিভা আবিষ্কার করে, কাজ করতে পারতেন। তাহলে আপনি সফল হতেন। আপনি নিজের প্রতিভার সন্ধান না করে, অন্যের প্রতিভার জন্য হিংসা করেছেন। এই হিংসার কারণে আপনি নিজের ধবংস ঢেকে আনছেন। তাই অন্যের প্রতিভা নিয়ে হিংসা বন্ধ করে, নিজেকে নিয়ে গবেষণা করুন। নিজের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারলে, আপনি সফল হবেন-ইনশাআল্লাহ।
সক্রেটিসের সফলতার সূত্র
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের (খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০ – খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯) কথা আমরা সবাই জানি এবং তাঁকে ভালোভাবে চিনি। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একজন জ্ঞানী ও দার্শনি ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হয়। তাঁকে নিয়ে শিক্ষানীয় কিছু গল্প আছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি গল্প হচ্ছে সফলতার রহস্য নিয়ে।
কোনো একসময় একজন যুবক সক্রেটিসকে সফলতার রহস্য প্রশ্ন করলেন। তিনি সেই যুবকটিকে তার পরের দিন সকালে নদীর ধারে তার সাথে দেখা করতে বললেন। যুবকটি যথার্থ সময়ে তাঁর সাথে দেখা করতে এলো। তিনি যুবকটিকে তার সাথে নদীর দিকে হাঁটার পথ অনুসরণ। হাঁটতে হাঁটতে তারা দুজন যখন নদীর পানির মধ্যে গেলো এবং পানি যখন ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছাল, তখন তিনি হঠাৎ করে যুবকটির ঘাড় পানিতে ডুবিয়ে ধরলেন। ছেলেটি পানির ভেতর থেকে খুব করে তার ঘাড় বের করার জন্য খুব চেষ্টা করলো। কিন্তু সক্রেটিস সেই যুবকের মাথা আরো জোরে পানির মধ্যে চেপে কিছু সময় ধরে রাখলেন, এবং একপর্যায়ে বাতাসের অভাবে ছেলেটির চেহারা নীল হয়ে গেলো। এবার তিনি যুবকের মাথাকে পানি থেকে টেনে বের করলেন। মুমূর্ষুর মতো হাঁপাতে হাঁপাতে সেই যুবকটি হা করে গভীরভাবে শ্বাস নিলো, সে অনুভব করলো এইমাত্র যেন সে মৃত্যু থেকে জীবন ফিরে পেলো।
যুবকটি স্বাভাবইক হলে সক্রেটিস তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার মাথা যখন পানির নিচে ছিলো তখন তুমি সবচেয়ে কোন জিনিসটি চাচ্ছিলে?” ছেলেটি উত্তর দিল, “শুধু একটা জিনিস চাচ্ছিলাম,সেটা হলো বাতাস”।
সক্রেটিস বলেন, “এটাই সফলতার এক মাত্র গোপন রহস্য।”
“পানিতে তোমার মাথা ডুবে থাকার সময় বাঁচার জন্য যেভাবে তুমি একনিষ্ঠভাবে বাতাস চাচ্ছিলে, ঠিক তেমনভাবে যদি তুমি সাফল্য অর্জনের জন্য চেষ্টা কর, কেবল তখনই তুমি সফল হবে। এর বাইরে সাফল্যের আর অন্য কোন গোপন রহস্য নেই।”
তাঁর সফলতার সূত্র থেকে শিক্ষা নিন
শিক্ষা:
যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কোনটি? জানেন কি? সেটি হলো- প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা। স্বল্প আগুন যেমন বেশি তাপ দিতে পারে না, ঠিক তেমনই একটি দুর্বল প্রচেষ্টা সফলতার খুব ভালো ফলাফল দিতে পারে না। যে কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য সাফল্যের অনুপ্রেরণা আসে জীবন্ত আকাঙ্ক্ষা থেকে।
সুতরাং আপনার মনের মধ্যে সাফল্যের অগ্নি জ্বালিয়ে দিন দাউদাউ করে, সেটি হতে পারে আপনার জীবনের ছোট-বড় যে কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য। সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ, ২দিন আগে অথবা পরে।
সফলতার এই নীতি তখনই প্রয়োগ করবেন, যখন আপনি আপনার প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারবেন। আপনি যদি নিজের সম্ভাবনা, বিশেষত্ব ও প্রতিভা আবিষ্কার না করে, যদি এই নীতি নিজের কাজের উপর প্রয়োগ করেন, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবেন। তাই “নিজেকে জানুন”-(Know thyself)। নিজের প্রতিভা আবিষ্কার করুন। আল্লাহ আপনাকে যে প্রতিভা দান করেছেন তা যদি আবিষ্কার করতে পারেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন।
সৃষ্টির মাঝে আপনি এক অনন্য সৃষ্টি
আপনি অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ- অতীতে কেউই আপনার মতো হয়নি আর ভবিষ্যতেও কেউই আপনার মতো হবেননা। আল্লাহ্ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত কোন দু’জন লোককেও দেখতে হুবহু একই রকম করে সৃষ্টি করেননি।
একটু চিন্তা করে দেখুন, ইতিহাস পড়ুন- কোন সাহিত্যককে পাবেন না, যার সাথে অন্য সাহিত্যিকের মিল আছে, অনুরূপভবে বিজ্ঞানি, নেতা-শাসক, দার্শনিক, শিল্পিদের ক্ষেত্রেও সত্য। পবিত্র কুরআনে ২৫ নবীর কথা বর্ণনা করে হয়েছে। কোন নবী কি অন্য কোন নবীর মতো ছিল?
বলা হয়ে থাকে অন্যের অনুকরণ আত্নহত্যার শামিল। আপনি যখন অন্যকে অনুকরণ করবেন তখন আল্লাহ আপনাকে যে বৈশিষ্ট্য দান করেছেন তা ধবংস হয়ে যাবে। অন্যের কন্ঠস্বর, চালচলন, আচার-আচারণ, স্বভাব ও অভ্যাসকে অনুকরণ করার মানে নিজের বিশেষত্ব ধবংস করা। অনুকরণ করার কুফল হলো – কৃত্রিমতা, হতাশা ও নিজের স্বতন্ত্র সত্তার বিনাশ ।
“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা (ক্যারিয়ারের ভিন্নতা) বিভিন্ন রকমের।” (সূরা আল লাইল/৪)
বলা হয়ে থাকে, “যে ব্যক্তি এমন কাজ করতে চেষ্টা করে যা তাকে মানায় না সে ঐ লোকের মতো যে-বালুময় চরে আম গাছ বা বট গাছ লাগায়।”
আমাদের প্রত্যেকেই অনন্য। আমাদের নিজস্ব স্বভাব বৈশিষ্ট্য, মেধা এবং ক্ষমতা আছে যা আমাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
তাই, নিজের ব্যক্তিত্বকে অন্যদের সাথে মিশিয়ে ফেলা উচিত নয়।
বরং, আমাদের উচিত নিজেকে বুঝতে এবং নিজেকে চিনতে চেষ্টা করা।
এই আত্ম-অন্বেষণের মাধ্যমেই আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারি।
চিন্তার বৈচিত্রতার মাঝে বসবাস করা শিখতে হবে
সবাই যদি একই চিন্তার হতো তাহলে পৃথিবী ধবংস হয়ে যেত। পৃথিবী এগুচ্ছে মানুষের চিন্তার ভিন্নতার কারণে। আমাদের চিন্তার বৈচিত্রতার মাঝে বসবাস করা শিখতে হবে। প্রকৃতির বৈচিত্রতার দিকে খেয়াল করুন। সব ফুল কি একই রকম? সব ফুলের গন্ধ কি এক। যত ফুল ততই সৈন্দর্য্য। যত চিন্তার বৈচিত্র হবে ততই পৃথিবী সামনের দিকে এগোবে। সব মাছ কি একই রকম? সব মাছের স্বাদ যদি একই রকম হতো, তাহলে কেমন হত? সব খাদ্য ও স্বাদ কি একই রকম? সব খাদ্যের স্বাদ যদি একই রকম হত, তাহলে কেমন হত? যদি সব জিনিস একই রকম হতো। তাহলে তো পৃথিবী কেমন হতো। সব মানুষের চেহারা যদি একই রকম হতো তাহলে কেমন হতো? যেমন মানুষের চেহারা এক রকম নয়, তেমনি সব মানুষের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম হবে না। মানুষের চিন্তার ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে বহু ধরেণের শিল্পের জন্ম হয়েছে। চিন্তার ভিন্নতার কারণেই বিজ্ঞানের নানা শাখার জন্ম হয়েছে। চিন্তার ভিন্নতার কারণেই বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার আমরা ভোগ করছি।
সফল ও ব্যর্থ মানুষের মধ্যে পার্থক্য কি?
সফল মানুষ নিজের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারে, আর ব্যর্থ মানুষ নিজের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারে না। সফল মানুষগণ সফল কারণ তারা তাদের প্রতিভার সঠিক ব্যবহার করতে পারে। ব্যর্থ মানুষগণ তাদের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারে না। ফলে তারা জীবনে ব্যর্থ হয়। শারীরিক অক্ষম ও স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তিগণও সফল হচ্ছে। কারণ তারা তাদের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পেরেছে।
জ্ঞান অর্জন করা ফরজ যে বিষয়ে কাজ করতে চান
জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। (ইবনে মাজাহ – হা/২২৪)
সাঁতার না জেনে গভীর জলে মাছ শিকার করতে সফল তো হবেনই না উপরন্তু মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে ।
“পড় তোমার পালনকর্তার নামে” এটি হচ্ছে কুরআনের প্রথম বাণী। আপনি যে কাজই করতে চান না কেন, প্রথমে আপনাকে সে সম্পর্কে জানতে হবে। ধরুন, আপনার কোন প্রিয়জন আপনাকে একটি কার গাড়ী উপহার দিল, যদি আপনি এটি চালাতে না জানেন? আপনি কি চালাতে পারবেন? অবশ্য আপনাকে শিখে নিতে হবে। তার পর চালাতে পারবেন। আর যদি না জেনে গাড়ি স্টার্ট দেন তাহলে আপনার মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
হিংসা, রাগ, অহংকার ও আবেগের দাহনে কোন সিন্ধান্ত নিবেন না। আগে জানুন তার পর সিন্ধান্ত নিন। কারণ আপনার ভুল সিন্ধান্তের কারণে আপনার পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ বা গোটা জাতি ক্ষতির স্বীকার হতে পারে। যেমনঃ একজন জাতীয় নেতার ভুল সিন্ধান্তের ফলে যেমন গোটা জাতিকে ভোগান্তি ভুগতে হয় তেমনি আপনার ব্যক্তি জীবনের ভুল সিন্ধান্তের ফলে গোটা পরিবারকে ভোগান্তি ভুগতে হয়। অনুরূপ ভাবে একজন প্রতিষ্ঠানের মালিক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সুতরাং আপনি যে বিষয়ে সফল হতে চান সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ফরয। কেননা ইসলাম বলে সালাত, সিয়াম হজ, যাকাত আপনার জন্য ফরয,আপনি যদি হজ করতে চান তাহলে আপনার জন্য প্রথম ফরয হলো-সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা। তবে কানা পন্ডিতদের থেকে সাবধান। তারা আপনাকে ভুল তথ্য বা জ্ঞান দিতে সিদ্ধহস্ত।
ব্যবসাও একটি ইবাদত। আপনি যদি ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনার জন্য প্রথম ফরজ হচ্ছে-ব্যবসা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। যদি হালাল উপায়ে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং ও চাকুরি করেন, তবে সেটাও ঈবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
কাজ বা ইবাদাতের পরিমাণের চেয়ে জ্ঞানের পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ইবাদাতের পরিমাণ বেশি হবার চেয়ে জ্ঞানের পরিমাণ বেশি হওয়া উত্তম। (মিশকাত হা/২৫৫)
আমরা ইবাদত বলতে কেবল মসজিদে যাওয়া বুঝি। বস্তুত ব্যবসা, চাকুরি, ফ্রিল্যাংসিং ও যেকোন কাজ ইসলামের নীতি অনুযায়ী করলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। নবী করিম (সাঃ) আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে কাজের চেয়ে জ্ঞানের পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত। তাই আপনি যে পরিমাণ প্রতিদিন কাজ করবেন তার চেয়ে প্রয়োজনে জ্ঞান অর্জনে বেশি সময় দিতে হবে-এটাই রাসুলের নির্দেশ।
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য সম্ভাবনাময়ী একটি সেক্টর। আমাদের দেশের অনেক ছেলে-মেয় এই সেক্টরে কাজ করে কোটিপতি হচ্ছে। শিক্ষিত বেকারদের বেকারত্ব নিরসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এই সেক্টর। এই সেক্টরে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করা যায় তেমনি বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানিতে দেশে বসে উচ্চ বেতনে চাকুরিও করা যায়। এই সেক্টরে আছে স্বপ্ল-পুঁজি বা নামে মাত্র পুঁজিতে নানা ব্যবসা। এই সব ব্যবসা করে আমাদের দেশের অনেক ছেলে-মেয়ের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দেশ এ সেক্টরে পিছিয়ে পড়ছে। এর কারণ হলো আমাদের পরিবারের অসহযোগিতা ও আমরা যে বিষয়ে কাজ করতে চাই, সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে অনিহা। নবী করিম (সাঃ) এর আদর্শ হলো কাজে চেয়ে জ্ঞানের পরিমাণ বেশি হওয়া উত্তম। তাই এই সেক্টর থেকে টাকা আয় করতে হলে আপনাকে বেশি বেশি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এই সেক্টর নতুন হওয়ার জন্য অনেকে এ বিষয়ে অজ্ঞ। ফলে পরিবার থেকে আমরা অসহযোগিতামূলক আচারণ পাচ্ছি। কোন মেন্টরের অধিনে কাজ করেল-এই সেক্টরে সফল হওয়া সহজ হয়। আর নিজে নিজে কাজ করতে গেলে অনেক কাঠ-খড় পোহাতে হয়।
ছোট ছোট কাজ থেকেও বড় হওয়া যায়
আমি কিছু দিন আগে খবরে দেখলাম-এক গরীব শিক্ষিত ছেলে দিনমুজিরির কাজ করে কম্পিউটার কিনেছে। সে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং করতে চেয়েছিল। কিন্তু কম্পিউটার কেনার টাকা ছিল না তার। তাই সে দিনমুজিরির কাজ করে কম্পিউটার কিনে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে। ফ্রিল্যান্সিং করে সে এখন কোটিপতি।
আমি অনেক সফল ব্যবসায়ীকে চিনি যাদের ব্যবসা করার পুঁজি ছিল না। তাই তাদের চাকুরি করতে হয়েছিল। চাকুরি করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পুঁজি সংগ্রহ করা। চাকরিই তাদের সফলতা এনে দিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা চাকুরি করে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করে-আজ তারা প্রতিষ্ঠিত।
আমি কয়েক বছর হোটেলে ম্যানেজারে হিসেবে চাকুরি করেছিলাম। কিছু স্বল্প বেতনের বাবুর্চি ও বয় পরিকল্পিত জীবন যাপন করায়-তারা এখন হোটেলের মালিক। তাদের অর্থনৈতিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
২০০১ সালে একটি দৈনিক পত্রিকায় পড়েছিলাম-একজন সফল কৃষকের সফলতার গল্প। একজন শিক্ষিত যুবকের চাকুরি হচ্ছিল না। অনেক বার চাকুরির জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি বার বার ব্যর্থ হোন। অবশেষে বাবার দেয়া সামান্য জমি নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেন। ১০ বছরের ব্যবধানে তিনি অনেক জমি ও অর্থের মালিক হয়ে যায়।
আজকের যে বিখ্যাত বাটা ব্রান্ড দেখছেন, তার প্রতিষ্ঠাতা টমাস বাটা ছিলেন একজন মুচি। তার বাপ-দাদা সবাই ছিলেন দক্ষ চর্মকার। ৬ বছর বয়স থেকে বাবার কাছে চামড়ার কাজ শিখতে শুরু করেন তিনি। ১২ বছর বয়সেই টমাস জুতো তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না
অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করবেন না। করলে ভাগ্য অস্বীকার কারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন। চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ একেক জন একেক ভাবে দিয়ে থাকে।
-অনেকের টাকা আছে কিন্তু মনে শান্তি নাই। কিন্তু অনেকে গরীব কিন্তু শান্তিতে আছে।
-অনেকে বড় লোক কিন্তু সমাজে তার সম্মান নাই। আর অনেক গরীব লোক আছেন যাদের সমাজে সম্মান আছে।
-অনেকের সুন্দরী বউ আছে কিন্তু সম্পর্ক ভালো না। আবার অনেকে অসুন্দর বই নিয়ে সুখে আছে।